চিনি / SUGAR
চিনির মাঝে থাকা খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান-

একে টেবল সুগার বা হোয়াইট সুগার (সাদা চিনি) বলা হয়। এগুলো উচ্চমাত্রায় রিফাইন বা পরিশোধন করা থাকে। এগুলো সাধারণত পাওয়া যায় আখ, সুগার বিট ইত্যাদি থেকে। এ ধরনের চিনি ঘরোয়া রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত হয়।

এটা গুঁড়ো চিনি। এটাকে টেন পারসেন্ট সুগারও বলা হয়। এটা বেক পণ্য ডেকোরেশনে (সজ্জায়), বরফ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আইস কিউব, ললির ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়।
এটাও তাপ সহনশীল। অন্যান্য চিনি থেকে দানাটা একটু বড়। কিছু কিছু বিস্কুটের ওপরে নতুন মাত্রা দিতে এবং মচমচে করার ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়।
এটাও কম প্রক্রিয়াজাত। এর দানাও বড়। গন্ধটা অন্য চিনি থেকে একটু ভিন্ন থাকে। দোকানের চা, কফি এগুলোকে মিষ্টি স্বাদের করতে সাধারণত এগুলো ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কেক, কুকিজে ব্যবহার করা হয়।
এই চিনিও আখ থেকে পাওয়া যায়। বড় দানাদার এবং হালকা খয়েরি বর্ণের হয়। এই চিনি ক্যারামেল ফ্লেভারের হয়। এটা কোমলপানীয় শিল্পে ব্যবহার করা হয়।
এটা অপ্রক্রিয়াজাত আখের চিনি। এখান থেকে মলাসেসকে (খাদ্য উপাদান) আলাদা করা হয় না। এটা গাঢ় অথবা হালকা দুটো বর্ণের হয়। একটু ভেজা ভেজা এবং আঠালো হয়। কড়া গন্ধের হয়। বালুর মতো হয়। বার-বি-কিউ বা মেরিনেট সুগারে এটা ব্যবহার করা হয়।
এটা পরিশোধিত হোয়াইট সুগারের মধ্যে সামান্য পরিমাণ মলাসেস যোগ করা হয়। এটা ভেজা ভেজা এবং বালুর মতো হয়। ক্যারামেল ফ্লেভারের হয়।
এটার গন্ধও অনেক কড়া থাকে। এটা এক ধরনের পরিশোধিত হোয়াইট সুগার। এর মধ্যে বেশি পরিমাণে মলাসেস যুক্ত থাকে।
চিনির রয়েছে অনেক উপকারিতা। চিনির বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
যখন শরীরে চিনির ঘাটতি হয়, তখন শক্তি কমে যায়। আর চিনি খেলে শরীর তাৎক্ষণিক শক্তি পায়।
এর মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোলিক এসিড, যা ত্বকের টোনকে ঠিক রাখে। ত্বকের তৈলাক্ততার ভারসাম্য রক্ষা করে, দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
চিনি নিম্ন রক্তচাপকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে। নিম্ন রক্তচাপ হলে চিনির শরবত বা চিনি খাওয়া যেতে পারে। যারা লো ব্লাড প্রেসারে ভোগেন তাদের সবসময় সঙ্গে চিনি রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
চিনির দানা যেকোনো কাটাছেঁড়া ক্ষেত্রে প্রলেপ হিসেবে লাগালে অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে।
চিনি বিষণ্ণতা দূর করতেও সাহায্য করে।
চিনি খাওয়ার ক্ষেত্রেই শুধু উপকারিতা আছে তা নয়, চিনির রয়েছে নানাবিধ ব্যাবহারও। এবার চিনির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হল।
ত্বকের মরা কোষ দূর করতে প্রাকৃতিক স্ক্রাব খুবই উপকারী। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য চিনি ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল ও নরম হবে এবং ত্বকের মরা কোষ দূর হবে।
খাওয়ার পর হাতে খাবারের গন্ধ শুধু সাবানে দূর হয় না। এ সমস্যার সমাধানে চিনি ব্যবহার করতে পারেন। লিকুইড সাবান, চিনি ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে হাত ধুয়ে ফেললে গন্ধ যাওয়ার পাশাপাশি হাতের ত্বক নরম ও মসৃণ হবে।
শকর্রাসমৃদ্ধ চিনি শুধু মানুষের শরীরের পুষ্টি জোগায় না, এটি ফুলকেও জীবন্ত রাখতে সাহায্য করে। একটি বোতলে তিন টেবিল চামচ চিনি এবং দুই টেবিল চামচ ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এর পর ফুলের ওপর ছিটিয়ে দিন। চিনি ফুলকে সতেজ রাখবে এবং ভিনেগার ফুলের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করবে।
কফি মেকার, জুস মেকারের যেকোনো দাগ দূর করতে চিনি বেশ কার্যকর। এক কাপ চিনি ব্লেন্ডারে নিয়ে পানি ছাড়া ব্লেন্ড করুন। এর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, সব দাগ দূর হয়ে যাবে। এটি খুব সহজে চায়ের ফ্লাক্সেরও দাগ দূর করে। এক চামচ চিনি দিয়ে ফ্লাক্সের মুখ ভালো করে বন্ধ করে রাখুন। কয়েক ঘণ্টা পর ভালো করে ঝাঁকিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক নিমেষেই আপনার চায়ের ফ্লাক্সের দাগ দূর হয়ে যাবে।
বয়ামে বিস্কুট রেখে এর মধ্যে চিনির কিউব দিয়ে বয়ামের মুখ ভালো করে বন্ধ করুন। এতে বিস্কুট মচমচে থাকবে। এভাবে আপনি রুটি, কেক, এমনকি চিজও রাখতে পারেন।
অনেক সময় কাপড়ে লেগে থাকা কালির দাগ উঠতে চায় না। এ ক্ষেত্রে গরম পানির মধ্যে চিনি মিশিয়ে দাগের ওপর মেখে এক ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন, কাপড়ের দাগ দূর হয়ে যাবে।
অনেক সময় গাড়ি নানা কাজে হাতে কালির দাগ লেগে যায়। এই কালির দাগ সহজে যেতে চায় না। হ্যান্ডওয়াশের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে ভালো করে ঘষে হাত ধুয়ে ফেলুন। এক নিমেষেই হাতের কালির দাগ দূর হয়ে যাবে
চিনি খাওয়া কি জরুরি-
কৃত্রিম চিনি কি নিরাপদ-
কৃত্রিম চিনির প্রভাব এ কি হয় ?
অতিরিক্ত মিষ্টি থেকে সাবধান
চিনি এক প্রকার সুমিষ্ট পদার্থ যা গাছ বা ফলের রস থেকে প্রস্তুত করা হয়। ভারত বর্ষে সাধারণত আখ বা ইক্ষুর রস থেকে চিনি তৈরি করা হয়। এছাড়া বীট এবং ম্যাপল চিনির অন্য দুটি প্রধান বনজ উৎস। চিনির রাসায়নিক নাম সুক্রোজ। এক অণু গ্লুকোজের সঙ্গে এক অণু ফ্রুক্টোজ জুড়ে এক অণু সুক্রোজ তৈরি হয়। রসায়নাগারে যে চিনি প্রস্তুত করা হয় তা প্রধানত: ঔষধে ব্যবহার করা হয়।
দানাদার চিনি-
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
ভিটামিনসমূহ
রিবোফ্লাভিন (বি২)-(2%)0.019 mg
চিহ্ন ধাতু সমুহ
ক্যালসিয়াম-(0%)1 mg
অন্যান্য উপাদানসমূহ
পানি-0.03 g
(Percentages are roughly approximated using US recommendations for adults.)
বাদামী চিনি
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স) পুষ্টিগত মান
ভিটামিনসমূহ
থায়ামিন (বি১)-(1%)0.008 mg
চিহ্ন ধাতুসমুহ
ক্যালসিয়াম-(9%)85 mg
অন্যান্য উপাদানসমূহ
চিনি উদ্ভিদের টিস্যুতে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু সুক্রোজ বিশেষ করে আখ এবং চিনির বীজতে কেন্দ্রীভূত থাকে, বাণিজ্যিকভাবে আদর্শমানের চিনি তৈরীর জন্য পরিশ্রুত করতে দক্ষ নিষ্কাশন প্রয়োজন । প্রায় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্ব হতে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চিনির উৎপত্তি হয়। চিনির কাজঃ চিনি এক প্রকার শর্করা, যা খেলে আমাদের দেহে শক্তি যোগায়।.....
চিনিকে সাধারণত ১১ ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো :-
১. দানাদার চিনি-
২. সাসটার সুগার-
এটাও দানাদার রিফাইন বা পরিশোধিত চিনি। এটা হোয়াইট সুগারের তুলনায় বেশি পরিশোধিত থাকে। এ ধরনের চিনি সিরাপ আর ড্রিংক ককটেলে ব্যবহৃত হয়।
৩. কনফেকশনারস সুগার-
৪. পার্ল সুগার-
এটা অন্যান্য চিনির থেকে একটু শক্ত হয়। একটু ক্রিমি রঙের হয়। এটা উচ্চ তাপেও সহনশীল, গলে না। এটা প্রেসটি, কুকিজ, বাটার বান ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়।
৫. স্যানডিং সুগার-
৬. কেইন (আখ) সুগার-
এই চিনি আখ থেকে তৈরি হয়। এটা কম প্রক্রিয়াজাত চিনি। এই চিনি সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের। এটা শরীর সহজে শোষণ করতে পারে।
৭. ডিমেরারা সুগার-
৮. টারবিনেডো সুগার- এক ধরনের ব্রাউন চিনি। এর গন্ধ অনেক কড়া থাকে এবং এটা ক্যারামেল ফ্লেভারের হয়। এটি প্রেসটি, বাটার বান, কুকিজ ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়।
৯. মাসকোভাডো সুগার- একটি অপরিশোধিত বেতের চিনি, যাতে প্রাকৃতিক গুড় থাকে। এটি সাধারণত ক্যাকেস, কুকিজ, ব্রাউনিজ, মিষ্টি, পাস্তা, ব্রেড, স্যান্ডউইচ, স্যালাড, স্যুপ, গ্রেভি, স্যাউস, এবং আরও অনেক কিছুতে ব্যবহার করা হয়।
১০. লাইট ব্রাউন সুগার ও ডার্ক ব্রাউন সুগার- এর গন্ধ অনেক কড়া থাকে এবং এটা ক্যারামেল ফ্লেভারের হয়। এটি প্রেসটি, কুকিজ, বাটার বান ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়
মিষ্টি জাতীয় নানা খাবার প্রস্তুত করতে চিনির বহুল ব্যবহার আমাদের সবার জানা। শরীরে শর্করার চহিদা মেটানোর উপকরণ হিসেবেও বেশ পরিচিত। কিন্তু খাবার প্রস্তুত ছাড়াও চিনির রয়েছে উপকারী বহু গুণ। ব্যবহার জানা থাকলে নিজেই পেতে পারেন এসব উপকার।আসুন আজ জেনে নেব, চিনির ভিন্ন ব্যবহারে অসাধারণ উপকার সম্পর্কে।
চিনি খাওয়ার উপকারিতা:-
#দ্রুত শক্তি দেয়:
#ত্বকের টোন ঠিক রাখে:
#নিম্ন রক্তচাপ:
#কাটা ছেঁড়া:
#বিষণ্ণতা দূর করে:
চিনির ব্যবহার:
#ত্বকের মরা কোষ দূর:
#হাতের গন্ধ তাড়ায়:
#ফুল তাজা রাখে:
#ব্লেন্ডারের দাগ দূর:
#বিস্কুট মচমচে রাখে:
#কাপড়ের দাগ দূর:
#কালির দাগ দূর:
আশ্চর্য শোনালেও সত্য যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) প্রতিদিন ৬ থেকে ১২ টেবিল-চামচ পরিমাণ চিনি খাওয়ার পরামর্শ দেয়। যা বর্তমানে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের একেবারে উল্টো।
প্রথমেই জানতে হবে চিনির বিভিন্ন ধরণ সম্পর্কে। যেমন- কৃত্রিম চিনি, আখ থেকে তৈরি স্ফটিকীকরণ বা দানাদার চিনি এবং প্রাকৃতিক চিনি অর্থাৎ খাবার থেকে পাওয়া শর্করা।
আমাদের নিত্যভোজ্য চিনি হল দানাদার চিনি। দুধ, চা, কফি, শরবত, ডেজার্টজাতীয় খাবারে সাধারণত এই চিনি ব্যবহৃত হয়।
কৃত্রিম চিনি আমাদের কাছে ‘সুগার-ফ্রি’ চিনি হিসেবে পরিচিত।
আর সবজি, বীজজাতীয় খাবার, ফল ইত্যাদিতে থাকে প্রাকৃতিক চিনি বা শর্করা।
আখ থেকে তৈরি করা চিনি শরীরের জন্য সবচাইতে উপকারী। তবে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবারে থাকা চিনি আসে প্রধানত উচ্চমাত্রায় ফ্রুক্টোজযুক্ত কর্ন সিরাপ থেকে, যা শরীরের জন্য সবচাইতে ক্ষতিকর। ভারতীয় পুষ্টিবিদ শালিনি সিংহাল বলেন, “চিনি খাওয়া শরীরের জন্য জরুরি নয়। আমাদের শরীর চিনি থেকে গ্লুকোজ তৈরি করে- যা স্টার্চ, আমিষ ও চর্বি থেকেও পাওয়া সম্ভব। মনোযোগ দেওয়া উচিত আঁশে ভরপুর খাদ্যাভ্যাসে, যাতে আছে জটিল কার্বোহাইড্রেইট।”
ওজন কমাতে সহায়ক স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে চিনি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এই পদ্ধতি আমাদের শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ গ্লুকোজ তৈরি করার জন্য শরীরে চিনি প্রয়োজন।
আরেক ভারতীয় পুষ্টিবিদ রাজুতা দিওয়াকার তার ব্লগের মাধ্যমে জানিয়েছেন, কীভাবে প্রক্রিয়াজাত শরবত ও দই খাওয়ার কারণে নিজের অজান্তেই আমরা চিনি গ্রহণ করি।
তার মতে, চিনি ক্ষতিকর নয়। তবে কয়েক বছর ধরে চিনি গ্রহণ করার পদ্ধতিগুলোতে যে পরিবর্তন এসেছে সেগুলো ক্ষতিকর।
চর্বি নাকি চিনি- কোনটা বেশি ক্ষতিকর? এই বিতর্কে পুষ্টিবিদরা চিনিকেই সবচাইতে ক্ষতিকর হিসেবে তুলে ধরেন।
তাদের যুক্তি, উচ্চহারের বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে চর্বি পোড়ানো সম্ভব। তবে চিনির ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন।
স্থূলতা, হজম ও বিপাক ক্রিয়ায় জটিলতা, যকৃত নষ্ট হওয়া ইত্যাদি চিনির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা। অতিরিক্ত চিনি শরীরের ‘ইনসুলিন’ ও ‘লেপ্টিন’ প্রতিরোধ করার ক্ষমতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
আসলে অপরাধী চিনি নয়, অতিরিক্ত গ্রহণ করাই হল সব নষ্টের মূল।
ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি মিষ্টি খাওয়ার আকাঙক্ষা কমাতেও কার্যকরী কৃত্রিম চিনি।
‘সুগার ফ্রি’ লেখা ডায়েট ড্রিংকস, বেইক করা খাবার, ফ্রিজে রাখা ডেজার্ট, লজেন্স, দই, চুইং গাম সবকিছুতেই দেখা মিলবে এই কৃত্রিম চিনির। চা, কফি ইত্যাদি পানীয়তে মেশানোর জন্য প্যাকেটজাত তো আছেই, রান্নায় কিংবা বেইক করতে ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম চিনিও মেলে বাজারে।
তবে মনে রাখতে পরিমাণে কম ব্যবহারের বিষয়টি। সাধারণ চিনির তুলনায় কৃত্রিম চিনিতে মিষ্টির মাত্রা একশ গুণ বেশি হয়ে থাকে।
স্বাস্ব্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ) এজিন্সির ‘জেনারেলি এক্সেপ্টেড অ্যাজ সেইভ (জিআরএএস) তালিকায় পরীক্ষিত এবং স্বীকৃত কৃত্রিম চিনি আছে ছয়টি। অসংখ্য গবেষণা চালানোর প্রেক্ষিতে নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে পণ্যগুলোকে।
এসব পণ্য দিনে কতটুকু পর্যন্ত গ্রহণ করা যাবে তার মাত্রা প্রকাশ করা হয়েছে ‘একসেপ্টেবল ডেইলি ইনটেক (এডিআই)’য়ের তালিকায়।
এসিজালফেম-পটাশিয়াম (এস-কে): ‘সানেট’ ও ‘সুইট ওয়ান’ ব্র্যান্ডের কৃত্রিম চিনিগুলো এধরনের। সাধারণত অন্য আরেকটি ক্যালরি কম এমন কৃত্রিম চিনির সঙ্গে মিশিয়ে এগুলো তৈরি করা হয়। তাপ ও মৃদু অম্লীয় কিংবা ক্ষারীয় পরিবেশেও এগুলো নিজের গুণাগুণ ধরে রাখতে পারে। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এবং পানীয়তে মেশানোর পাশাপাশি রান্নায়ও ব্যবহার কররা যায়। বেশিরভাগ কার্বোনেইটেড পানীয় তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়, তবে আরেকটি কৃত্রিম চিনির সঙ্গে মিশিয়ে।
অ্যাসপাটেম বা দ্য ব্লু প্যাকেট: এই পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দুই শতাধিক গবেষণা। ‘ফিনাইলালাইন’ নামক রাসায়নিক উপাদানের উৎস এটি, যা ‘ফিনাইলকিটোনুরিয়া’য় আক্রান্ত ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলতে হবে। তাপে এই পণ্য দ্রুত নষ্ট হয়, তাই রান্নায় ব্যবহার করা যাবে না। ‘নিউট্রাসুইট’, ‘ইকুয়াল’ ব্যান্ডের কৃত্রিম চিনিগুলো এই ধরনের।
নিওটেম: এই কৃত্রিম চিনির মিষ্টির মাত্রা সাধারণ চিনি থেকে ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার পরিমাণ বেশি। এতেও ‘ফিনাইলালাইন’ থাকে, তবে যেহেতু পরিমাণে খুবেই কম লাগে তাই উপদানটির মাত্রা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। পণ্যটি এই নামেই বিক্রি হয়। বড়মাপের খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে এটি।
স্যাকারিন বা দ্য পিঙ্ক প্যাকেট: একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে তরল এই বিকল্প চিনি। স্যাকারিন থেকে মুত্রথলিতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে বলা হয় ১৯৭০ সালের এক গবেষণায়। তবে গবেষণাটি মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে বাতিল করে দেয় এফডিএ। এটি তাপ সহনশীল, তাই রান্নায় ব্যবহারের জন্য আদর্শ। ‘সুইট অ্যান্ড লো’, ‘সুইট টুইন’ ও ‘সুগার টুইন’ ব্র্যান্ডের কৃত্রিম চিনিগুলো আসলে স্যাকারিন।
স্টেভিয়া বা দ্য গ্রিন প্যাকেট: ‘স্টেভোসাইড’, ‘রেবাউডিসাইড এ, বি, সি, ডি, এফ’, ‘ডালকোসাইড এ’, ‘রুবাসোসাইড’ এবং ‘স্টেভিওলবায়োসাইড’ নামেও পরিচিত এই কৃত্রিম চিনি। ব্র্যান্ডের নামগুলো হলো ‘সুইট লিফ’, ‘সান ক্রিস্টাল’, ‘স্টোভিয়া’, ‘ট্রুভিয়া’ এবং ‘পিউরভায়া’। এটি তরল এবং দ্রবণীয় ট্যাবলেট আকারে পাওয়া যায়। কিছু ‘স্টেভিয়া’ পণ্য ‘জিআরএএস’ স্বীকৃতি পায়নি। তাই ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বিক্রি করতে হয়, চিনির বিকল্প হিসেবে নয়। পানীয় তৈরিতে ব্যবহার হয় এটি। বেইক করতেও ব্যবহার করা যাবে। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করা আবশ্যক।
সুক্রালোজ বা দ্য ইয়েলো প্যাকেট: তাপ সহনশীল- রান্নায় ও বেইক করতে সবচাইতে সহজে ব্যবহারযোগ্য। পানি দ্রবণীয় ট্যাবলেট, দানাদার ট্যাবলেট এবং বেইকিং ব্লেন্ড হিসেবে পাওয়া যায় এটি। ব্র্যান্ডের নাম হলো ‘এন’জয়’ এবং ‘স্প্লেন্ডা’।
রান্নায় কৃত্রিম চিনি ব্যবহার: রান্নায় কৃত্রিম চিনি ব্যবহারের আগে প্যাকেটের গায়ের নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বেইক করা খাবারে চিনির পরিবর্তে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করলে রং হালকা হতে পারে। কারণ প্রাকৃতিক চিনির তুলনায় কৃত্রিম চিনির খাবারে বাদামি রং আনার ক্ষমতা কম থাকে। কেক, মাফিন, পাউরুটি বানানোর ক্ষেত্রে কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করলে ফোলাভাব কমতে পারে। ভিন্ন হতে পারে খাবারের ‘টেক্সচার’।
রান্না কিংবা বেইক করার সময়ে তারতম্য হতে পারে। কৃত্রিম চিনি দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়ার পর মুখে ভিন্ন স্বাদ লেগে থাকতে পারে। খাবারটির স্থায়িত্বও কমতে পারে।
ক্যালরিমুক্ত এসব কৃত্রিম চিনির ক্ষতিকারক কয়েকটি দিক সম্পর্কে জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইট।
১৮৭৮ সাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে স্যাকারিন। সেসময়ই থেকেই কৃত্রিম মিষ্টি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’
সুগার বিট, সয়া, এবং ভুট্টা থেকে এরিথ্রিটল, নিওটাম, অ্যাসপারটাম এবং সুক্রালোজ নামক কৃত্রিম চিনি তৈরি করা হয়। এসব ফসলের বীজ ‘জেনেটিক্যালি মডিফায়েড’ করা যা সাধারণত পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয় না।
পানি দূষিত করে
শরীরের বিভিন্ন মারাত্বক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য কৃত্রিম চিনি বিশেষ পন্থায় তৈরি করা হয়। এর ফলে তা দ্রুত গলে না। ২০০৯ সালে সুইডেনের গবেষকরা পরিশোধিত পানিতে ‘অ্যাসসালফেম কে’ ও ‘সুক্রালোজ’ নামক কৃত্রিম মিষ্টি খুঁজে পান। সাত ঘণ্টা ঘন ময়লা পানিতে ডুবিয়ে রাখার পরও এই কৃত্রিম মিষ্টি পানিতে সম্পূর্ণ গলে যায়নি। এই গবেষণার ৪ বছর পর কানাডার গবেষকরা বিভিন্ন পানি শোধনাগারে এই কৃত্রিম মিষির অস্তিত্ব খুঁজে পান।
ডায়বেটিস
যারা ডায়েট সোডা পান করেন তাদের টাইপ টু ডায়বেটিসে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। যারা ডায়েট সোডা পান করেন তাদের শরীরে এই ক্যালরি বিহীন পানীয়গুলোর কেনো অকার্যকর তার কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। হতে পারে তাদের খাদ্যাভ্যাস অথবা অন্য কোনো জৈবিক কারণ।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খায় না তাদের চাইতে ডায়েট সোডা পানকারীর ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। একই গবেষণায় আরও দেখা যায়, সাধারণ সোডা পানকারীদের অতিরিক্ত ওজন হওয়ার সম্ভাবনা ডায়েট সোডা পানকারীদের তুলনায় কম।
খাওয়ার পরিমাণ বাড়ায়
মুখে খাবারের স্বাদ ও অনুভূতি দৈনিক ক্যালরি গ্রহণ এবং শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরির পরিমাণের সামাঞ্জস্যের উপর প্রভাব ফেলে। কৃত্রিম চিনিযুক্ত খাবার মুখে অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে। ফলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে
জিরো-ক্যালরি ধরনের মিষ্টি খাওয়ার কারণে শরীরে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় খাবারের প্রতি আসক্তি বেড়ে যেতে পারে। কৃত্রিম চিনি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন এবং সন্তুষ্টির অনুভূতি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
এবার আসি সব শেষ কথায় -
চিনি শরীরে প্রয়োজন হলেও অতিরিক্ত মিষ্টি বা শর্করা গ্রহণের ফলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
হৃদপিণ্ড: চিনি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে রক্তে মিশে যায় এবং রক্তের অতিরিক্ত শর্করা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন- হৃদপিণ্ডের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
২০১৩ সালে ‘দ্যা জার্নাল অব দ্যা আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েসন’য়ে প্রকাশিত এক গবেষোণা থেকে জানা যায় যে, অতিরিক্ত চিনি অর্থাৎ শর্করা বিশেষত, গ্লুকোজ হৃদপিণ্ডের উপর কুপ্রভাব ফেলে এবং এর পেশির কার্যকারিতা কমায়।
এমনটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তা হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের 'ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের একটি প্রতিবেদন।
নারী-স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘উইমেন্স হেলথ’য়ের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় কৃত্রিম মিষ্টি দেওয়া খাবারে ভিন্নধর্মী চিনি ও অধিক পরিমাণে ফ্রুক্টোজ পাওয়া যায় যা রক্তে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করে। এটা 'ট্রাইগ্লিসারাইডস' নামক এক ধরনের চর্বি উৎপাদন করে যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের জন্য দায়ী।
মস্তিষ্ক: অতিরিক্ত চিনি মস্তিষ্কের জন্য যে ভয়ঙ্কর হতে পারে তা ২০০২ সালে করা লস অ্যাঞ্জেলস'য়ের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালফোর্নিয়া’র এক গবেষণা থেকে জানা যায়।
অতিরিক্ত চিনি নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টরের সঙ্গে জড়িত যা মানুষের স্নায়ু সংক্রান্ত ও আচরণগত বিষয় (বিডিএনএফ)য়ের উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়।
এছাড়াও অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, এই রাসায়নিক উপাদান বিষণ্নতা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
বৃক্ক: কিডনি বা বৃক্ক রক্ত পরিশোধনের কাজ করে। অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি কিডনির কাজ বাড়িয়ে দেয়। পরে তা ক্ষতি করে।
রক্তে শর্করা বাড়া টাইপ টু ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী। অনেকদিন ধরে অতিরিক্ত চিনি পরিস্রাবণ বা ছাঁকার কাজ করতে থাকলে বৃক্কের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকে এবং দেহের বর্জ্য অপসারণে বাধা তৈরি করে।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েসন’য়ের মতে, বৃক্কের কার্যকারিতা হ্রাসই বৃক্কের রোগ। এটা চিকিৎসা করা না হলে বৃক্ক পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। তখন কিডনি বা বৃক্ক পুনঃস্থাপন করার প্রয়োজন পড়ে কিংবা যন্ত্রের মাধ্যমে রক্ত পরিশোধন করতে হয়; যাকে বলে ডায়ালিসিস।
যৌন স্বাস্থ্য: খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত চিনি থাকলে রক্ত প্রবাহে প্রভাব ফেলে। আর অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ করলে পুরুষের লিঙ্গোত্থানেও সমস্যা হতে পারে।
২০০৫ সালে 'দ্যা জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন’য়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য ও লিঙ্গোত্থানের জন্য প্রয়োজন।
তবে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘নিউজ মেডিকেল’য়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় রক্তের শর্করা ডায়াবেটিসের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা লিঙ্গোত্থানের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি হওয়াতে বাধা দেয়।
২০০৭ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ মানুষের যৌন স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন টেস্টোস্টেরন ও এস্ট্রোজেনের মাত্রা হ্রাস করে।
যকৃৎ: অতিরিক্ত চিনি খাওয়া হলে তা যকৃতে চর্বির সৃষ্টি করে। ফলে যকৃতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। যদি ঠিকঠাক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে এটা অ্যালকোহল পানের মতোই ক্ষতিকর।ফলে যকৃতের কোষে ক্ষত তৈরি হয় যা 'সিরোসিস' নামে পরিচিত।
দি ডেইলি মেইল’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লন্ডন ভিত্তিক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ‘অ্যাকাডেমি অফ মেডিকল রয়াল কলেজেস’য়ের স্থূলতা বিষয়ক দলের সদস্য ডা. আসিম মালহোত্রা বলেন, ‘‘লিভার সিরোসিস’ দেখা দেওয়ার প্রধান কারণ অ্যালকোহল। আর বাজে খাদ্যাভ্যাসের কারণে যকৃতে চর্বি জমে, যাকে বলে ‘ফ্যাটি লিভার’ রোগ।”
-চিনি যদি খেতেই হয় দেশি লাল চিনি খান-
ভালো থাকুন।
-Akhter uz zaman DHMS