Header Ads Widget

Responsive Advertisement

প্রতিদিন কাচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা

 

রসুন কি?

ছোট থেকে বড় কেউ কি প্রশ্ন করে-রসুন কি? আমার মনে হয় না।রসুন একটি অতিব গুণময় মশলা যা পেঁয়াজের জাতি ভাই। রসুন এর(বৈজ্ঞানিক নাম: Allium sativum) রসুন রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধি কারক হিসাবে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয় প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসক হিপোক্রেটস এবং মেডিসিনের জনক গ্যালেন রসুনকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতেনমিসরীয়, ব্যাবিলনীয়, রোমান ও চৈনিক সভ্যতায় ওষুধ হিসেবে রসুন ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গেছেরসুন সুপারফুডের অন্তর্ভুক্ত একটি খাদ্য

                   


প্রতিদিন হাজারো মানুষ ইন্টারনেটে রসিনের উপকারিতা, রসুন কিভাবে খেতে হবে, রসুন খেলে কি কি অসুবিধা হতে পারে ইতযাদি লিখে সার্চ দেন এবং জানতে চেস্টা করেন।

আসুন জেনে নেই আমাদের মনের সেই প্রশ্নের উত্তর গুলি-

১) #রসুনে_কি_কি_খাদ্য_পুস্টি_উপাদান_আছে?

২) #রসুন_খাওয়ার_উপকারিতা_কি?

৩) #রসুন_খাওয়ার_অপকারীতা_কি?

৪) #কি_ভাবে_রসুন_খাবেন?

৫) #রসুন_খেলে_কি_কি_ক্ষতি_হতে_পারে?

রসুন থেকে যে কয়েকটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়:

১।থিয়ামিন (ভিটামিন বি১)

২।রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২)

৩।নায়াসিন (ভিটামিন বি৩)

৪।প্যন্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫)

৫।ভিটামিন বি-৬(পাইরিডক্সিন)

৬।ফোলেট (ভিটামিন বি৯)

৭।ভিটামিন সি

৮।আয়রন

৯।ক্যালসিয়াম

১০।সোডিয়াম

১১।ফাইবার

১২।ক্যালোরি

১৩।প্রোটিন

১৪।কার্বোহাইড্রেট

১৫।ম্যাঙ্গানিজ

১৬।তামা

১৭।এলিসিন ও

১৮।সেলেনিয়াম

এখন বাজারে মানুষের চাহিদা পূরনের জন্য বৈজ্ঞানিক উপায়ে হাইব্রিড রসুন উৎপাদন করা হয়।তাতে রাসায়নিক সার, কিটনাশক, হরমোন প্রয়োগ করে কম সময়ে অধিক ফসল উৎপাদন করা হয় যা মানব দেহের জন্য ততোটা স্বাস্থ্যকর নয়,বাজারে কত ধরনের রসুন আছে তা কি জানেন?আমাদের বাজারে তিন ধরনের রসুন পাওয়া যায়। হাইব্রিড বা ইম্পোরটেড রসুন, দেশি রসুন এবং এক কোয়া দেশি রসুন।



[বাজারে ব্লাক গারলিক (Black Garlic)নামে একটি রসুন পাওয়া যায় কেউ আবার ভাববেন না সেটা বাগানে চাষ করা রসুন, সেটি সাদা রসুনকে প্রসেস করে বানানো একটি খাদ্য]

 

আমাদের গৃহিনীরা হাইব্রিড রসুন ব্যবহার করতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করেন, কারন এর সাইজ টা বড়, তাই প্রসেস করতে সময় কম লাগে।

দেশি রসুন সাইজে ছোট হওয়ার কারনে প্রসেসিং এ সময় বেশি লাগে।এর খাদ্যমান ভালো হলেও তা এখন মানুষ সাদরে গ্রহন করে না।

এক কোষ বা এক কোয়া এর দেশি রসুন যা বাজারে সব দোকানে পাওয়া যায় না।এটি ঔষধ হিসাবেই বেশি ব্যবহৃত হয়।এখনো এর চাষ জৈব সার প্রয়োগেই করা হয়।যারা ঔষুধী গুনাগুন সমৃদ্ধ রসুন খেতে চান তারা এই এক কোয়া রসুন সংগ্রহ করে খান। 

 

রসুন খাওয়ার উপকারিতা-

রান্না করার সময় সব ভাত জাতীয় খাদ্য ছাড়া সকল খাবারেই আমরা মসলা হিসাবে রসুন ব্যবহার করি।রান্না করা কোন খাবারের চাইতে কাঁচা যে কোন খাদ্য এর ঔষধি গুনাগুন বেশি থাকে। সেই হেতু তরকারিতে দেয়া রসুনের চাইতে কাচা রসুন খেতে পারলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।আর সেটা যদি সকালে খালি পেটে খাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই।তবে যাদের গ্যাস্ট্রিক আলসার আছে তারা খাবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো। এখন আসি কাঁচা রসুন খেলে আমাদের কি কি উপকার পেতে পারি আসুন জেনে নেই-



·    রক্ত পরিশোধিত করে-

এই সুপারফুডের মধ্যে অ্যালিসিন নামক একটি প্রধান যৌগ রয়েছে, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে রক্তের পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে গিয়ে রক্ত চলাচলে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে, যার দরুণ রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে যেসব রোগের সৃষ্টি করে, তা আর হতে পারে নানিরোগ দেহের জন্য বাধাহীন মসৃণ রক্ত চলাচল অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়


·    ত্বক ভালো রাখে-

প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে ত্বক ভালো থাকে, ‘সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং’ রোধ করে ফলে ত্বকে বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে না। চেহারায় কোনো দাগ থাকলে কমে যায়

·    ব্রেনের সেল ড্যামেজ রোধ করে-

রসুনে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট সেল ড্যামেজ কমিয়ে দেয় ফলে আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়


·    হাড়ের শক্তি বাড়ায়-

চল্লিশ বছর পর বিভিন্ন কারণে নারীদের হাড়ের শক্তি কমে যায়। প্রতিদিন ২ গ্রাম করে রসুন খেলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রায় ভারসাম্য থাকে, যাঁদের কম থাকে, তাঁদের কিছুটা বাড়ে। ফলে হাড়সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা কমে যায়। এমনকি যে নারীদের মেনোপোজ হয়ে গেছে, তাঁরাও নিয়মিত রসুন খেলে অনেক উপকার পাবেন


·    সংক্রমণ প্রতিরোধে-

আমাদের শরীরে যেকোনো সময়ে যে কোন রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। ফুসফুসে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হতে পারে। অ্যালার্জি সমস্যা এবং অনেকেই সারা বছর সর্দি-কাশির সমস্যায় ভোগেন। ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটতে পারে, যা থেকে মুক্তি পেতে রসুন এর রস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে


·   উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে-

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অনেক খাদ্যের মাঝে অন্যতম একটি হচ্ছে রসুন। শরীরের এলডিএল বেড়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন সকালে খালি পেটে খেলে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব


·    হৃৎপিণ্ডের শক্তিবর্ধক-

যাঁরা হৃদপিণ্ডের ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে চিন্তিত আছেন, মাঝেমধ্যে বুকের বাঁ পাশে ব্যথা অনুভূত হয়, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয়, তাঁদের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন পানি দিয়ে গিলে খেলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হবে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে হৃদপিণ্ডের ব্লকগুলো আর বাড়বে না, বুকের ব্যথা কমে যাবে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হবে না


·    পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক-

পুরুষের যৌনক্ষমতা নানান কারণে কমে যেতে পারে যার মাঝে একটি কারন লিংগের শিরা উপশিরাতে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়া।রক্ত পাতলা হলে তার প্রবাহে কোন অসুবিধা হয় না আর রসুন এই কাজ করে বলেই যৌনক্ষমতা বাড়ায় বলা হয়ে থাকে


·    শরীরে অবাঞ্ছিত ফোলা বা গোটা-

অনেকের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হীন ফোলা পিণ্ড থাকে যা বাড়ে কমে না কিন্তু ফোলাটা মিশেও না, এমন ফোলা বা গোটা শরীর থেকে মুছে ফেলতে প্রতিদিন ছয় কোষ রসুন খালি পেটে সকালে,দুপুর ও রাতে খাবার পর খেলে ফোলাটা ধীরে ধীরে মিশে যাবে, না পারলে হালকা করে ভেজে ওখেতে পারেন

·         ডায়াবিটিসের আশঙ্কা কমে-                                                                                                            রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা কিছুটা কমতে পারে রসুন।

     ·   রসুন দিয়ে ওজন কমানোর উপায়-                                                                                        প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গরম পানিতে দুই কোষ রসুন দিন এবং উক্ত পানিতে লেবুর রস দিয়ে কিছুক্ষন পর খেয়ে ফেলুন। নিয়মিত খেতে থাকলে ওজন কমতে থাকবে

·          ·   ক্যান্সার প্রতিরোধে রসুনের উপকারিতা-                                                                                 রসুনে এলিসিন নামের একটি উপাদান থাকে, যা ক্যানসার সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকর ভুমিকা রাখে তাই নিয়ম করে কাঁচা রসুন খেলে পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া ও ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে।

·          ·   কোলেস্টেরল কমাতে-                                                                                                                 রসুনে অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজ ও অর্গানোসালফার যৌগ, যা শরীরে উচ্চমাত্রায় ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে

·          ·   ব্যথা কমাতে-                                                                                                                          অনেকেই দেখেছেন দাদি নানীরা শরীরের কোথাও ব্যথা করলে সরিষার তেলে রসুন ভেজে মালিশ করে দিলেই ব্যথা কমে যেতো। ব্যথা কমার কারণ কি ? কারণ রসুনে অ্যালিসিন নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা স্থানীয় প্রতিরোধ প্রণালীতে সক্ষম করে।এই স্থানীয় প্রতিরোধ প্রণালী্তে সক্ষম বলেই ব্যথা কমাতে সাহায্য করে

·   রসুন খাওয়ার অপকারীতা-                                                                                                        যেকোন জিনিস অতিরিক্ত খাওয়া কখনো উচিত নয়। সকালে খালিপেটে বেশি রসুন খাওয়ার ফলে রসুনের সালফার পেটে ডাইরিয়া সৃষ্টিকারি গ্যাস তৈরি হতে পারে। খালি পেটে রসুন খেলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারেকারো কারো এলারজি ও  অত্যাধিক পরিমাণে ঘাম হওয়ার সম্ভবনা থাকে। যারা ওয়ারফারিন, ক্লোপিডোগেল এবং অ্যাসপিরিন ওষুধ খান তারা অতিরিক্ত রসুন খেলে রক্ত পাতলা হয়ে রক্তপাত বাড়তে পারে নির্ধারিত সার্জারির কমপক্ষে দুই বা তিন সপ্তাহে আগে রসুন খাওয়া বন্ধ করা উচিত কারণ অতিরিক্ত রসুন সেবন করলে রক্তের প্রবাহ বেশি হয়

                   (আলু বোখারা খেলে কি উপকার পাবেন - ক্লিক করুন এখানে ) 

·   কি ভাবে রসুন খাবেন-                                                                                                                       রসুন একটি প্রাকৃতিক এন্টি বায়োটিক। শরীরের সপ্ত ধাতুকে পূর্ণ করে বলেই নাকি আয়ুর্বেদে একে রসায়ন বলে। রসুনকে বলা হয় গরীব এর পেনিসিলিনপূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দু কোয়া রসুনই যথেষ্টরান্না করে যে রসুন আমরা খাই তা অপ্রতুল এবং অতি তাপে তার খাদ্যমান অনেকটাই নস্ট হয়ে যায়।রান্না ছাড়া আপনি আরো অনেক ভাবেই রসুন খাওয়ার অভ্যাস করলে বেশি উপকার পাবেন-

খালি পেটে দুই কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে এক গ্লাস পানি খেতে পারেন।

ঘি এ ভেজে খেতে পারেন, খাওয়ার পর গরম পানি খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। 

হালকা ভেজে ভর্তা করে খেতে পারেন।

রাতে দুই কোয়া রসুন কুচি কুচি করে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই রসুনের পানি খেতে পারেন এটি ও পরিক্ষিত পদ্ধতি

মধুতে বা সরিষার তেলে  মিশিয়ে একটি কাঁচের জাড়ে রেখে সাতদিন পর থেকে আচার এর মতো করে খেতে পারেন।

 

সর্বশেষ কথা

আশা করি এই পোস্ট এর সাহায্যে সবাই রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের যদি রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে ভালো লেগে থাকে। তাহলে অবশ্যই পরিচিতজন এর সাথে শেয়ার করবেন। যাতে সবাই রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারে। লিখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ


মোঃ আখতার উজ জামান  ডিএইস এম এস                                                                                    মোবাইলঃ- ০১৯৮৯৯৮৩৬৮০



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ